সাব-রেজিস্ট্রার বদলির ঘুষ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত: টিআইবি

সাব-রেজিস্ট্রার বদলির ঘুষ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত: টিআইবি

মতিহার বার্তা ডেস্ক: একজন সাব-রেজিস্ট্রারকে বদলি করতে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা পেতে ৫০০ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় বলেও টিআইবির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

 গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মচারীদের পদোন্নতি ও বদলির জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে তদবির ও নিয়ম বহির্ভূত অর্থের লেনদেন ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আছে। সাব-রেজিস্ট্রারদের বদলির ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ৩ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এবং ঢাকা বা তার আশেপাশের এলাকায় বদলির জন্য ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভূত অর্থের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। আবার সাব-রেজিস্ট্রার থেকে জেলা রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও নিয়ম-বহির্ভূত অর্থের লেনদেন, প্রভাব বিস্তার বা তদবিরের অভিযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, “ভূমি সম্পদ অর্জন, ধারণ ও হস্তান্তরে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার চর্চার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নিবন্ধন। এটি একদিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবাখাত অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য রাজস্বের উৎস। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং এখাতে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সার্বিকভাবে আমরা দেখতে পাই যে, দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত অর্থ আদায়, অবৈধ লেনদেন এবং সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করা হচ্ছে। এখাতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছে এবং জবাবদিহিতার যে কাঠামো আছে তা কাজ করছে না। বরঞ্চ অংশীদারিত্ব ও যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে এবং সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি বিরাজমান, যার জন্য একধরণের প্রতিষ্ঠিত রূপরেখা তৈরী করা আছে।”

দলিল নিবন্ধন ও দুর্নীতি সমার্থক হয়ে গেছে মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, “আমরা চাই এ খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হোক, জনগণ দুর্নীতি থেকে মুক্ত হোক। তা করা গেলে এখাত থেকে রাজস্ব আদায়ও অনেক বৃদ্ধি পাবে। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে খাতটিকে দুর্নীতিমুক্ত করার মত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব, আর তা করতেই হবে। কোন অপরাধ যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটতে দেয়া হয় তার বিস্তৃতি ও গভীরতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক, যার ফলাফল হলো দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। এই সেবা খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় অন্যতম উপায় হিসেবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিজিটাইজেশন নিশ্চিত করার সুপারিশ করছে টিআইবি।”

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “দলিল নিবন্ধন সেবার ক্ষেত্রে যেই পরিমাণ চাহিদা আছে, সে তুলনায় দক্ষ জনবলের ঘাটতি আছে। তদারকির অভাব আছে, যারা তদারকি করছেন তারাও সঠিকভাবে তদারকি করছেন না ইত্যাদি নানা কারণে সেবা দেয়ার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার তার ঘাটতি আছে। আমরা সুপারিশ করেছি যে, দলিল নিবন্ধন সেবার ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিতে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

মতিহার বার্তা ডট কম – ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply